জিরুনার ছবিযুক্ত ক্যালেন্ডার ছাপাতে গিয়ে; জেলা পরিষদের লাগামহীনভাবে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের নতুন ক্যালেন্ডার ২০২৫ খ্রিঃ ছাপানোর পরেও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়াারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার ব্যক্তিগত ছবিসংবলিত না ছাপানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করে আবার নতুন করে ছবি সংযুক্ত করে ক্যালেন্ডার ছাপাতে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয়ের অভিযোগের যেন শেষ নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিষদের সদস্যরা। এ নিয়ে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতেও পড়তে হচ্ছে তাদেরকে।
অভিযোগ রয়েছে,প্রায় সাড়ে ৮লক্ষ টাকার ব্যয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ডেস্ক ও ওয়াল ক্যালেন্ডার ছাপলেও
চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার ছবি না থাকায় ক্যালেন্ডারটি প্রচার ও বিতরণ বহুদিন ধরে আটকে রয়েছে। চেয়ারম্যানের ছবিসহ আরও একটি বাড়তি পাতা ছাপানোর কারণে ক্যালেন্ডারটি এখনো ছাপা খানায় রয়েছে। এতে করে রাষ্ট্রীয় তহবিলের বাড়তি টাকা খরচ হলেও কবে নাগাদ ক্যালেন্ডারটি বিতরণ হবে তা অনিশ্চতায় মধ্যে রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের এবারের ইংরেজী নববর্ষের ক্যালেন্ডারে স্থান পেয়েছিল জুলাই-আগষ্টে শহীদ আবু সাঈদের দুলর্ভ ছবিসহ ছয় ঋতু আর পাহাড়ের জীবন-চিত্র নিয়ে সৃজনশীল চিন্তা চেতনা। তবে পাহাড় হোক বৈষম্যহীন সম্প্রীতিময় এমন প্রতিপাদ্যে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ক্যালেন্ডারটি প্রচার ও বিতরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় পরিষদের খোদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। প্রায় সাড়ে ৮লাখ টাকার ব্যয়ে প্রকাশিত ছয় পাতার এই ক্যালেন্ডারে তার কোনো ছবি কেন স্থান পেলোনা? সেটাই ছিল বাঁধার মূল কারণ।
একটি সূত্র জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তবে এবার ছয় ঋতু আর পাহাড়ের জীবন-চিত্র নিয়ে সৃজনশীল চিন্তা চেতনার পাশাশি জুলাই-আগষ্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাহাড় হোক বৈষম্যহীন সম্প্রীতিময় এমন প্রতিপাদ্যে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে পুলিশের গুলির সামনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের সে বুক পেতে দেওয়া দুলর্ভ ছবি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার উল্লাসের ছবিসহ ছয় ঋতু আর পাহাড়ের আকর্ষনীয় জীবন-চিত্র স্থান পায়।
১৬ জানুয়ারি ছাপাখানা থেকে ক্যালেন্ডারটি পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে নিজের ছবি না থাকায় পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা ক্ষুব্ধ হন। জানতে চান কেন কালেন্ডারের পাতায় তার ছবি নেই। তিনি ক্যালেন্ডার বিতরণ বন্ধ করে দেন। আবার নতুন করে ক্যালেন্ডার ছাপাতে বলেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে চেয়ারম্যানের ছবি দিয়ে আরো একটি পাতা দিয়ে প্রেসে পাঠান। চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৬ পাতার ক্যালেন্ডার ৭ পাতা হয়।
বাংলাভিশনের গুগল নিউজ ফলো করতে ক্লিক করুন
খাগড়াছড়ি ইসলামী প্রেসের মালিক মো. শামসুল আমীন খাঁনের ছেলে আব্দুর রহমান সাদ জানানা, প্রথম দফায় দেড় হাজার পিচ ডেস্ক ও দুই হাজার পিচ ওয়াল ক্যালেন্ডারের ছাপতে খরচ হয়েছে ৮ লাখ ৩০ হাজার ৫শত টাকা। নতুন করে আরো এক পাতার খরচ হিসেবে করে বলতে হবে।
এদিকে চেয়ারম্যানের মনোবাসনা পূর্ন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় তহবিলের অর্থ অপচয়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্যরা। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাথোয়াই মারমা বলেন, চেয়ারম্যানের মনোবাসনা পূরণে এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছু না। ক্যালেন্ডার ছাপানোর পর তা বিতরণ না করে আবার নিজের ছবিযুক্ত ছবি দিয়ে ক্যালেন্ডার ছাপানো স্বেচ্ছাচারিতা ও মনগড়া। এর নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অপর সদস্য নিটোল মনি চাকমা বলেন, ১৪ জানুয়ারি প্রেস কর্তৃপক্ষ ক্যালেন্ডার সরবরাহ করেছে। ক্যালেন্ডারে জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের বেশ কিছু দুলর্ভ ছবিসহ ছয় ঋতু আর পাহাড়ের জীবন-চিত্র নিয়ে সৃজনশীল ছবি স্থান পেয়েছে। কিন্তু সে ক্যালেন্ডার বিতরণ করা হয়নি। এটা দু:খজনক।
নিটোল মনি চাকমা আরও বলেন, শুরু থেকে চেয়ারম্যানের সাথে সদস্যদের টানাপোড়েন চলছে। প্রায়ই ঝগড়া চলে। চেয়ারম্যানের কারণে জেলা পরিষদের ইমেজ সংকটে পড়ছে। পরিষদের অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা আগামী সংসদ সদস্য নির্বাচনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। রাষ্ট্রীয় অর্থে ক্যালেন্ডারে তার ছবিযুক্ত করা সেই নির্বাচনে প্রচারণার অংশ।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর বলে পরিচিত জিরুনা ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান ও আরও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ।
এর তিনদন পর ১০ নভেম্বর নব নিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা। তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তার নানা দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে জেলা জুড়ে বিস্তর সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে শুরু থেকে অস্বস্তিতে ছিল পরিষদের নব নিযুক্ত সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও পরিষদে হস্তান্তরিত ২৪টি বিভাগের কর্মকর্তাসহ জেলার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফজর | ৫.৩০ মিনিট ভোর |
---|---|
যোহর | ১.৩০ মিনিট দুপুর |
আছর | ৪ টা বিকাল |
মাগরিব | ৬ টা সন্ধ্যা |
এশা | ৭.৩০ মিনিট রাত |
জুম্মা | ১.৪০ মিনিট দুপুর |